ইলিশ কেন সার্বজনীন উৎসবের প্রধান খাবার?

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৪, ২০১৭ সময়ঃ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর প্রাণের উৎসব। অনেক পরিচয়ে পরিচিত আমরা বাঙালিরা। কখনো মাছে-ভাতে বাঙালি আবার কখনো সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা , কখনো নদীমাতৃক দেশ , আবার কখনো বলা হয় হাজার রঙিন উপাদানে সমৃদ্ধ আমাদের সংস্কৃতি ।

সারা বছর কোনো না কোনো উৎসব নিয়ে আমরা মেতে উঠি । তেমনই একটি উৎসব হল “পহেলা বৈশাখ”। আজ আমরা সবাই গেয়ে উঠবো “এসো হে বৈশাখ , এসো এসো”।

বৈশাখের অন্যতম প্রধান উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে ইলিশ আর পান্তা । শহুরে মানুষেরা অনেক ঘটা করেই পান্তা ইলিশের আয়োজন করে । নিজেকে বাঙালি প্রমাণ করার জন্য সব চাইতে ভালো প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পান্তা – ইলিশ। তাই আজ বৈশাখের প্রথম দিনে ইলিশ এর সাথে পান্তা খেতেই হবে, না হলে বাঙালিয়ানাই বৃথা । অন্যদিকে গ্রামের খেঁটে খাওয়া মানুষরা প্রতিদিন সকালে উঠে পান্তা খেয়ে ক্ষেত খামারে কাজ করতে যায়, তফাৎ শুধু ইলিশ নিয়ে ।

সার্বজনীন উৎসবগুলোর খাবার এমন হওয়া দরকার যাতে আর্থিক দিক দিয়ে সব শ্রেণীর মানুষেরই তা গ্রহণের সামর্থ থাকে। কিন্তু পহেলা বৈশাখের প্রধান খাবার যদি ইলিশ পান্তা হয়ে থাকে আর সে উৎসবকে যদি সার্বজনীন উৎসব হিসেবে বলার চেষ্টা করা হয় তাহলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের জন্য তা অবশ্যই পরিহাসের। কারণ এই উৎসবের প্রধান খাবারটা থেকে দেশের অধিকাংশ মানুষই বঞ্চিত। এই প্রেক্ষাপটে কি করে এটা সার্বজনীন উৎসব হলো?

যতদূর জানা যায়, পহেলা বৈশাখ উদযাপনে পান্তা ইলিশের প্রচলন শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে এবং তা রমনার বটমূলে, এর উদ্যোক্তা ছিলেন সাংবাদিক বোরহান আহমেদ। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কোন ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি থেকে এ ধরণের  খেয়ালী চিন্তার উদ্ভব তা জানিনা। এমন লেখাও চোখে পড়েছে যেখানে, পান্তা ইলিশের উদ্যোগের ইতিহাসের রচনা করা হয়েছে অত্যন্ত দম্ভ ভরে, যেন এটি একটি বিশাল মহান কাজ। যা বাংলা সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ আর সেই সাথে বাঙালীকে করেছে ধন্য।

কিন্তু ইতিহাস বলছে, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সাথে পান্তা ইলিশ খাওয়ার কোনো সম্পর্কতো নেই-ই, বরং এক ধরণের বৈপরীত্য রয়েছে। তাছাড়া ইলিশ একটি অভিজাত মাছ। যে মাছ এদেশ ও জাতিকে আন্তর্জাতিকভাবে গৌরবান্বিত করেছে। যে মাছ সম্মানিত মেহমানদের আতিথেয়তার অন্যতম একটি উপাদান। তার সাথে বাধ্য হয়ে খাওয়া পান্তা ভাতকে অপূর্ব সমন্বয় করে বাঙালী সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার এই নিদারুণ উন্মাদনা সত্যিই ব্যথিত করে। ভাবিত করে এই দৈন্য দশা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে।

আমরা দিনের দিনের পর দিন শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি । কিন্তু একবারও চিন্তা করছি না শেকড় নড়বড়ে হলে আমাদের অস্তিত্বও যে হারিয়ে যাবে । শহুরে যান্ত্রিকতায় গা এলিয়ে না দিয়ে আমাদের ভাবা উচিত এখানে কতটুকু নির্ভরতা রয়েছে ? কবি গুরু রবি ঠাকুর অনেক আগেই বলে গেছেন – “সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙ্গালি করে, মানুষ করনি। আর কবে আমরা মানুষ হবো?

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G